রবিবার, ১৩ জুন, ২০১০

বেদনাক্রান্ত প্রেমিক মনের কথা কিংবা সসীমের বেদনা

সসীমের বেদনা
বিভিন্ন সময় বেদনাক্রান্ত হই। কেনো হই? একেকজন একেক কারণে হই। তবে সব কারণের প্রধান কারণ-নিজের সীমাবদ্ধতা। এই সীমাবদ্ধতা হতে পারে জ্ঞান, শক্তি, অর্থ কিংবা অন্য যে কোনো দিকে। আমার ইচ্ছা চাইলে-ই পূর্ণ করতে পারছিনা, বেদনা এখানেই। আমার খুব ইচ্ছে হয় পাখি হয়ে উড়তে। সারাদিন বায়ূদূষণমুক্ত আকাশে থাকতে। মাছের মতো শব্দদূষণমুক্ত জলের নীচে বসবাস করতে। সুশৃঙ্খল একটি স্বাধীন রাষ্ট্র-সমাজ গড়তে। আমি যা চাই তা পাইনা কিংবা করতে পারি না বলে বেদনাক্রান্ত হই। আমি দুর্বল, সবলের কাছে অপারগ। সে আমাকে জুলুম করছে কিন্তু আমি কিছুই করতে পারছি না। আমি ‘হ’ বললে হয় না। এ আমার সীমাবদ্ধতা। আমি অসীম নয়, সসীম। সসীমের বেদনা আমাকে আক্রান্ত করে। এই যে আমি লিখতে বসেছি, আমার কলম চলছে না। কেনো চলছে না? কারণ, হয়তো কলম চলানোর মতো যে জ্ঞান-বুদ্ধি-যোগ্যতার প্রয়োজন তা আমার নেই, কিংবা যেকোনো কারণে আমার মন চলছে না। লেখার জন্য মনের সহযোগিতা আবশ্যক। আমি আমার সমাজ, রাষ্ট্র এবং এখানকার মানুষ নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছেনা কিংবা হওয়ার লণ দেখিনা বলে হয়তো আমার মন আটকে গেছে। আমি বেদনাক্রান্ত হই আমাকে আর আমার দেশকে নিয়ে। মাঝেমধ্যে হই হতাশ। কখনো কখনো হয়ে যাই আশাবাদী। লেখালেখি করি এবং বাংলাভাষায় লেখি। বাংলাভাষায় আমার আগে আরো অনেকে লিখেছেন। আজও লিখছেন। আশা করি আগামীতে অনেকে লিখবেন। আমার অগ্রজ যারা লিখেছেন, লিখছেন তাদের পর আমি লিখে কেনো পাঠকের সময় নষ্ট করতে যাবো? এই প্রশ্ন আমাকে পীড়া দেয়। মাঝেমধ্যে মনে হয় আমার লেখালেখির কোনো প্রয়োজন নেই। সমাজ, রাষ্ট্র এবং মানুষ যদি আগের লেখাগুলো থেকে উপকৃত হতে চেষ্টা করতো তবে আমি কিছু লিখতে চেষ্টা করতাম। কিন্তু অতীত থেকে এই মুহূর্ত পর্যন্ত বিবেচনা করে কি আমরা বলতে পারবো বিগত লেখাগুলো থেকে এই দেশ-মাটি-সমাজ কিছুটা উপকৃত হয়েছে? তবে কেনো পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজ কিংবা রাষ্ট্র দিন-দিনে উন্নতির দিকে যাচ্ছে আর আমরা যাচ্ছি অবণতির দিকে? বিষয়টা কি? আমাদের কোথাও কি ত্রুটি আছে? এই সব প্রশ্ন পীড়া দেয়। বিভিন্ন প্রশ্নের মুখোমুখি আমি বেদনাক্রান্ত হই। আমরা নবাবী যুগে স্বাধীন ছিলাম এই বাংলাদেশ নিয়ে। আমাদের বিলাসি শাসকদের গাফলতির কারণে ইংরেজরা স্বাধীনতা লুঠে নিলো। অতঃপর পরাধীন হয়ে গেলাম। নেতারা বললেন, এদেশ বৃটিশদের শোষণ-নির্যাতনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, সমাজ এবং রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য স্বাধীনতা অপরিহার্য। তাদের কথা বিশ্বাস করে যুদ্ধ হলো, প্রাণ গেলো, মান-ইজ্জত গেলো। স্লোগান উঠলো-‘হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই, ভারতবর্ষ স্বাধীন চাই।’ আমরা নেতাদের কথা বিশ্বাস করে হিন্দু-মুসলিম মিলে লড়াই করলাম বৃটিশদের বিরুদ্ধে। সংঘবদ্ধ লড়াই-এর এক পর্যায়ে যখন দেশে স্বাধীনতার পূর্বণ তখন মুসলিম নেতারা বললেন, ভারত শাসনে ইংরেজরা যেমন আমাদেরকে শোষণ-নির্যাতন করছে তেমনি হিন্দু বর্ণবাদীরাও করবে। কোন ছেলে বাপের যতœ নেবে তা হাটুতে পশম গজানোর আগে-ই বোঝা যায়। তাই হিন্দু বর্ণচোরাদের সাথে আমাদের চলেনি, চলবে না। এখন প্রয়োজন মুসলিম অধ্যুষিত স্বাধীন এলাকা-পাকিস্তান। আবার হিন্দু নেতারা মুসলিম খেদাও আন্দোলন শুরু করে দিলেন। শুরু হলো হিন্দু-মুসলিম রক্তয়ী দাঙ্গা। আমরা সবাই স্ব স্ব নেতাদের প্রতি বিশ্বাস রেখে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলাম। কিন্তু আমাদের মুক্তির স্বপ্ন ব্যর্থ হলো। আমাদের নেতারা আবার বলতে শুরু করলেন-পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক শোষিত, বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছি আমরা। আমাদের স্বাধীনতা প্রয়োজন। আমরা শুরু করলাম স্বাধীনতা যুদ্ধ। নয় মাস যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীন হলো। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। আমাদের নেতাই স্বাধীনতার পরে নিজের সাথীদের অপকর্মে অতিষ্ট হয়ে বলতে থাকলেন-‘আমার ডানে চোর, বামে চোর, সামনে চোর, পিছনে চোর। আমার নিজের কম্বলটা পর্যন্ত আমি পাইনি।’ নেতা রা পেলেন না। নিজের লোকেরা-ই তাকে স্বপরিবারে হত্যা করলো। অতঃপর শুরু হলো মুক্তির জন্য বারবার আন্দোলন, সংগ্রাম। কিন্তু মুক্তি আমাদের ঘরে আর আসে না। শান্তি আমাদের জন্য কাল্পনিক সোনার হরিণ হয়ে গেলো। কেনো এমন হলো? এসব আমায় ভাবায়। ভাবনা থেকে কোনো ফল যখন আসে না তখন হই বেদনাক্রান্ত।

ভেজাল
মনে করুন, আপনি আমাকে বললেন একটা লেখা দিতে। কোনো বিষয় দিলেন না। বিষয়ের কোনো অভাবও নেই। কিন্তু লিখতে বসলেই মনে হয়-এই বিষয়ে তো অনেক লেখালেখি হয়েছে। আমার আগে যারা লিখেছেন তাদের লেখা থেকে কি কোনো উপকার এসেছে? তারা কি সমাজ এবং মানুষের সমস্যার পরিবর্তনযোগ্য কোনো কিছু দিতে পেরেছেন? ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, চর্যাপদ থেকে আমিপূর্ব সময় পর্যন্ত যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে কেউ না কেউ কিছু না কিছু দিয়েছেন, যা দিয়ে সমাজ, রাষ্ট্র এবং মানুষের উন্নতি আনা সম্ভব। কিন্তু তবু কেনো উন্নতি আসছে না? আমার ধারণা, এখানে প্রকৃত জিনিষগুলো থেকে যাচ্ছে মেকি জিনিষের আড়ালে। আমরা মেকি জিনিষগুলোকে সরিয়ে প্রকৃত জিনিষ বের করে সমাজে বিস্তার করতে হয়তো পারছি না। কেনো পারছি না? কারণ, আমরা সবাই ব্যস্ত ফাঁকিবাজী করে শুধু নিজের ঘর সাজাতে। আমরা একবারও ভেবে দেখি না, ঘরের সামনে মলমূত্র রেখে ভেতরে আতর-গোলাপ-ফুল-চন্দন দেওয়ায় কি লাভ হয়? নিজের পরিবারের সুখের জন্য যিনি জনগনের সম্পদ লুট করেন তিনি কি সুখি? মোটেও না। আমরা যারা রাষ্ট্রের সম্পদ আত্মসাৎ কিংবা ধ্বংস করি তাদের অবশ্যই একথা স্মরণ রাখতে হবে-তিনি কিংবা তিনির পরিবার এ রাষ্ট্রের-ই অংশ। এই রাষ্ট্র আমার, আমি এই রাষ্ট্রের-এই বিশ্বাস মনে তৈরি না হলে আপনি অবশ্য দেশপ্রেমিক নন। যিনি যে পদ্ধতিতে রাষ্ট্রের তি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন, তার স্মরণ রাখতে হবে, একই পদ্ধতিতে আরেক অসৎ রাষ্ট্রের সম্পদ লুঠ করছে। এভাবে দূষিত মানুষের সংখ্যাবৃদ্ধির ফলে এই রাষ্ট্র এবং সমাজের সর্বপ্রকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আপনার তির শিকার যেমন হচ্ছে অন্যের সন্তান, তেমনি দূষিত পরিবেশ থেকে রা পাচ্ছে না আপনার পরিবার কিংবা সন্তানও। যে বাবুর্চী কিংবা মালিক ভেজাল খাদ্য তৈরী করে তার রেস্টুরেন্টে বিক্রি করছে তার ভাবা উচিৎ অন্য আরেক রেস্টুরেন্টের ক্রেতা তার ছেলে, ভাই, বাপ কেউ না কেউ। আপনি ভেজাল খাদ্য পরিবেশন করে খুব লাভ করছেন, অন্যজন কি তা করতে পারে না? আপনি যার কাছ থেকে ভেজাল দ্রব্য খরিদ করছেন সে কি ঐ সব রেস্টুরেন্টের ঠিকানা জানে না যেখানে আপনার আপনজনেরা খাদ্য গ্রহণ করে? তা হলে আপনার আপনজনকে রার জন্য উচিৎ আমার আপনজনকে রা করা। ভেজালের বিরুদ্ধে প্রথমে আপনাকে সচেতন হয়ে উঠতে হবে। যারা ভেজাল দ্রব্য বিক্রি করে তাদেরকে প্রতিরোধে আপনাকে নেতৃত্ব দিতে হবে। তেমনি যে সকল কোম্পানীতে ভেজাল দ্রব্য তৈরী হয় এবং যে সকল দোকানে ভেজাল দ্রব্য বিক্রি হয় তাদের প্রতিও এক-ই কথা। শুধু দ্রব্যে ভেজাল নয়। সর্বক্ষেত্রে ভেজালের যে প্লাবন, তা রোধ করতে হবে সবাই মিলে। ভেজাল মুক্ত খাদ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, সমাজ, রাষ্ট্র, নেতা ইত্যাদি আমাদের প্রত্যাশা।

অসৎ উপার্জন
যিনি ঘুষ নিচ্ছেন তিনি নিশ্চয় জানেন, যিনি টাকা দিচ্ছেন তিনি খুব বিপদে পড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কিংবা অসৎভাবে কিছু আদায় করতে চেষ্টা করছেন। আপনি ঘুষখোর হলে চিন্তা করে দেখুন, এই ঘুষের টাকা আপনাকে কিংবা আপনার পরিবারকে সুখ দিচ্ছে কি? আমার বিশ্বাস দিচ্ছে না এবং দিতে পারে না। একবার নীরবে ভেবে দেখুন, কোথায়, কীভাবে অশান্তি তৈরি করছে আপনার জীবনে, সংসারে এই ঘুষের টাকা। শুধু ঘুষ নয়, সংসারকে সুখী করতে যতো অসৎ উপর্জন হচ্ছে সেই উপার্জন কি সংসারে সুখ আনতে পেরেছে? আর অসৎ কি নিজের বিবেকে সুখ পাচ্ছে? যদি আপনি একজন অসৎ অফিসার হয়ে থাকেন তবে ভেবে দেখুন, এই বিবেকের হাত থেকে নিজকে রা করবেন কী ভাবে? আপনার সামনে যদি কেউ কিংবা আপনার সন্তান কোনো অসৎ অফিসারকে গালি দেয় তবে আপনি কি বিবেকের কাছে আটকে গিয়ে কষ্ট অনুভব করবেন না? মনে করুন আপনি এক জায়গায় ঘুষ খাচ্ছেন, আর আপনার ছেলে অন্য জায়গায় কিছু করতে গিয়ে ঘুষ দিতে হচ্ছে আপনার মতোই আরেক অসৎকে। সে ঘুষ দিয়ে ফিরতে ফিরতে গালি দিচ্ছে-‘শুয়রের বাচ্চারা দেশটাকে নষ্ট করে দিলো।’ আপনি কি এই গালির অন্তর্ভুক্ত নন? আপনার ছেলে যদি অবগত হয় তার বাবা ঘুষ খায় তবে কি কোনোদিন বিবেক থেকে বুক উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে? যখন সিনেমায়, নাটকে, গল্পে ঘুষের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ করা হয় তখন কি আপনার এই সন্তানের মুখ ছোট হয়ে যায় না? আপনি একজনের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে আরেকজনের তি করছেন, আপনার মতো আরেকজন কি ঘুষ খেয়ে আপনার তি করতে পারে না? তাই বলছিলাম, ঘুষের তি থেকে আপনাকে বাঁচতে হলে প্রথমে আপনি আমাকে মুক্তি দিতে হবে। সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে তাওবা করে ঘুষের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির আন্দোলনে আসতে হবে। নিজের ভেতরের ঘুমন্ত মানুষটিকে জাগিয়ে বলতে হবে-আমি মানুষ হয়েছি। আশা করি যারা ঘুষের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা বিষয়টি ভাববেন। এই সময়ে ঘুষ ছাড়া আপনার সংসার চলবে না, এই তো আপনার দাবী। এই দাবী তো চোর-ডাকাতেরও। তা হলে আপনি আর চোর-ডাকাতের মধ্যে ব্যবধান কী? আপনার ইচ্ছাটাকে সৎ করে দেখুন, সৎ হয়ে যাবে আপনার জীবন। আপনার স্ত্রী-সন্তান কিংবা পরিবারের অন্যদের চাহিদা বেশি হওয়ায় আপনার ভেতরের পশুটা জেগে উঠেছে, এই তো কথা। কিন্তু এই পশুকে ধমন করে দেখুন আপনার পরিবারের অন্যদের ভেতরের পশুও ধমন হয়ে যাবে। প্রথমে একটু সমস্যা হতে পারে,কিন্তু সময় গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। ত্যাগটা নিজের থেকে-ই শুরু করতে হবে। দৃঢ়চিত্তে দাঁড়াতে হবে সততার শপথে। এই কথাগুলো আমি বলছিনা শুধু ঘুষখেকুদের উদ্দেশ্যে, আমি বলছি অসৎ উপার্জনকারী প্রত্যেক অসৎ ব্যক্তি এবং গোষ্ঠিকে।

সন্ত্রাস কিংবা মাফিয়াচক্র
নিজের স্বার্থে যিনি প্রতিষ্ঠানে কিংবা সমাজে সন্ত্রাসের মদদ দিচ্ছেন তিনি হয়তো ভাবছেন তার সন্তান কিংবা পরিবার এই প্রতিষ্ঠান কিংবা সমাজে নেই। কিন্তু গোটা রাষ্ট্রের পরিবেশ যখন নষ্ট হয়ে যাবে তখন কেউ কি রা পাবে? পাবে না। দেখুন চেয়ে আশপাশে অনেক ঘটনা আছে। আপনার সন্তান পড়ে প্রাইভেট স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায়। আপনি খুবই নিশ্চিন্ত। কিন্তু পাশের বাড়ির কিংবা মহল্লার সবাই আপনার সন্তানের মতো উন্নত প্রতিষ্ঠানে লেখা-পড়া করার সামর্থ রাখে না। গোটা মহল্লায় যদি দশটি ছেলে খারাপ-সন্ত্রাসী হয়ে যায়, আমি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আপনি মোটেও নিশ্চিন্ত হতে পারবেন না। বিশ্বাস রাখুন, আপনার পরিবার যে কোনো সময় যে কোনো ভাবে এখানে আক্রান্ত হতে পারে। যারা সন্ত্রাসী সৃষ্টি করেছেন নেতা হওয়ার জন্য তাদের ছেলে-ভাতিজা কিংবা অন্য প্রিয়জন যখন সন্ত্রাসী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে, কিংবা তারা যখন সন্ত্রাসী কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে পড়েন তখন হয়তো অনুভব করেন-কি ভুলটিই না হলো। কিন্তু মায়ের উপর সতিন উঠিয়ে সন্তান জন্মে লাভ কি? হয়তো আপনি আটকে গেছেন সন্ত্রাসী চক্রের হাতে একটা বা দু’টা অপকর্মের সূত্রধরে। মাফিয়াচক্র আপনাকে বেরিয়ে আসতে দিচ্ছে না বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিয়ে। আপনার ছোট অপকর্মগুলোকে সে বড় করে উপস্থাপন করে আপনাকে দিয়ে আরো বড় বড় অপকর্মগুলো করিয়ে নিচ্ছে। প্রশ্ন হলো, এখন কি করবেন? ভাবছেন পুলিশের কাছে গিয়ে সাহায্য চাইবেন। কিন্তু লাভ হবে কি? পুলিশ কি আপনাকে সহযোগিতা করবে? হয়তো করবে না। কেনো করবে না, এই রকমের ক্রিমিনালকে গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া তো তার দায়িত্ব। কিন্তু সে এই দায়িত্ব আদায় করবে না। হয়তো সে কিংবা তার উর্ধ্বতন কর্মমর্তা ক্রিমিনালের কাছ থেকে টাকা খেয়েছে। সব সময় যে টাকা খায় তা কিন্তু নয়। মাঝেমধ্যে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিংবা নেতার ছাপে পুলিশ থাকে অপারগ। এই অবস্থায় আপনি কি করবেন? তবু আমি বলবো, আপনি সাহস করুন। দাঁড়িয়ে যান। সত্যের পথে বিদ্রোহ করুন। আস্তে আস্তে কৌশলে নিজেকে সামলিয়ে আনতে চেষ্টা করুন। এদেশের স্বাধীনতার জন্য যারা যুদ্ধ করেছেন তারা নিশ্চয় জীবনকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। আপনি মনে করুন দেশ, সমাজ এবং মানুষের স্বার্থে একটা স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করছেন। আপনি এই রকমের মাফিয়াচক্রের হাত থেকে বাঁচার জন্য মৃত্যুকে অনিবার্য জেনে-ই যুদ্ধটা শুরু করুন। যুদ্ধের কৌশলটা আপনি আবিস্কার করুন। প্রথমে আপনি তাদের কাছে অনুরোধ করতে পারেন নিজের মুক্তির জন্য। যদি তাতে লাভ না হয় তবে প্রয়োজনে প্রকাশ্য বিদ্রোহ করুন পুলিশ, সাংবাদিক, সমাজের সৎ মানুষদের সহযোগিতা নিয়ে। এই বিদ্রোহ শুরুর আগে-ই আপনার মূল বক্তব্যটা লিখিত তৈরী করে রেখে দিন, যাতে কিছু ঘটে গেলে সবাই বুঝতে পারে ঘটনাটা কি। সত্যের পথে বিদ্রোহে যদি আপনার মৃত্যু হয় তবু অসৎ জীবন থেকে ভালো, এই বিশ্বাস মনে থাকলে-ই আপনি পারবেন বিদ্রোহ করতে। সত্যের পথে সময় আপনার সহায়ক হোক। সন্ত্রাসী আর মাফিয়াচক্রের হাত থেকে আপনি বাঁচুন এবং দেশ, জাতি, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে রা করুন।

প্রেম এবং দেশপ্রেম
প্রেম কী? এই প্রশ্নের উত্তরে আমি বলবো হৃদয়ের পূর্ণাঙ্গ দরজা খুলে আত্মার সাথে আত্মা একাকার হয়ে মিলনের নাম প্রেম। প্রেম হলো আত্মায় আত্মার টান। প্রেমের ক্ষেত্রে আত্মা আত্মার কাছে পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পন করতে হবে। প্রেমিক প্রেমিকা একে অন্যের আত্মার যন্ত্রনায় কষ্ট অনুভব করতে হবে। আবার একে অন্যের সুখে পরিতৃপ্ত হতে হবে। কেউ কারো তির চিন্তাও করতে পারে না। প্রেমের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ভণ্ডামী গ্রহণযোগ্য নয়। যদি বিন্দুমাত্র ভণ্ডামী মনে থাকে তবে বুঝতে হবে প্রেম নেই, আছে মুনাফিকী। ব্যক্তি প্রেমের ক্ষেত্রে যেমন ভণ্ডামী গ্রহণযোগ্য নয়, তেমনি দেশপ্রেমের ক্ষেত্রেও। দেশ প্রেমিক সেই ব্যক্তি যিনি গোটা রাষ্ট্রের প্রত্যেক মানুষ এবং বস্তুকে নিজের পরিবারের অংশ মনে করেন। একটা গাছের পাতাও তিনি নষ্ট করেন না। তিনি নিজের জন্য, সমাজের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য সমানভাবে কাজ করেন।বাংলাদেশ আমাদের। এদেশের মাটি ও মানুষ আমাদের। এদেশের স্বাধীনতার জন্য রক্তয়ী যুদ্ধ হয়েছে, প্রাণ বিসর্জন হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমরা আর দেশ প্রেমের উদাহরণ স্থাপন করতে পারিনি। আমরা সবাই বড়-ই স্বার্থপর হয়ে উঠলাম নিজ নিজ েেত্র। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমরা ত্যাগের সর্বোচ্চ উদাহরণ দিলাম, কিন্তু স্বাধীনতার পর আর আমরা ত্যাগে থাকতে পারলাম না। এমন কেনো হলো? আমাদের মধ্যে কেনো প্রকৃত দেশপ্রেম জাগ্রত হলো না? একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার তি হলে কষ্ট পায়, কাঁদে। আমরা কেনো রাষ্ট্রের তি হলে কষ্ট পাই না, কাঁদি না? তা হলে এই রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রের মাটি আর মানুষের প্রতি কি আমাদের প্রেম নেই? এদেশের তি হলে যারা নেতা-কর্তা তাদের কষ্টে চোখে জল আসা উচিৎ ছিলো, অথচ আমরা দেখি তারা নিজের নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব রার স্বার্থে এ দেশে যা তা করছেন। আমরা সাধারণ মানুষ তাদের কর্মে বেদনাক্রান্ত হয়ে যাই। আমারা অপারগ হয়ে যাই নেতাদের-কর্তাদের শক্তির কাছে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছে হয় চিৎকার দিয়ে বলি-হে নেতা মহোদয়গণ, তোমরা আমাদেরকে মুক্তি দাও তোমাদের অসৎ কর্ম থেকে। কিন্তু চিৎকার দিতে পারি না। কারণ, এখানেও আছে মাফিয়াচক্র। কর্তাদের হাতে আছে আইনের মাফিয়াচক্র আর নেতাদের কাছে ক্যাডার। কর্তারা যে কোনো মামলায় কিংবা বিশেষ মতা আইনে বন্ধী করে নিয়ে স্তব্ধ করে দিতে পারেন আমাদের মুখ। কিছু করার নেই। তাদের আছে অসীম আইনী মতা, আমরা সসীমের মাঝে আছি আটকে। আর নেতাদের বিরুদ্ধে বললে ক্যাডারদের হাতে মার খেয়ে প্রাণ যাওয়ার আশংকা আছে। তবু কেউ না কেউ তো বলতে হবে। মুখ খুলতে হবে। এদেশকে যেমন একাত্তরে যুদ্ধ করে স্বাধীন করা হয়েছে তেমনি এদেশের সর্বপ্রকার ত্রুটিগুলো জীবন-মৃত্যুর মধ্যখানে দাঁড়িয়ে পর্যালোচনা করে প্রতিরোধ-প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। দাঁড়াতে হবে সাবাইকে স্ব স্ব ক্ষেত্রে দেশপ্রেম আর মানবতার অনুপ্রেরণা বুকে নিয়ে। নিজের পরিবারের তিতে আমরা যেমন প্রতিবাদী হয়ে উঠি তেমনি এদেশ এবং দেশের মানুষের যে কোনো তিতে প্রতিবাদী হতে হবে। নিজের সন্তানের তি হলে আমরা পাগল হয়ে যাই, কিন্তু একবারও ভাবি না এই দেশে-ই তো থাকে আমার সন্তান। এই দেশ না থাকলে আমার অস্তিত্ব থাকবে না, এই দেশ না থাকলে আমার পরিবার থাকবে না, এই দেশ না থাকলে আমি মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারবো না। আমার মসজিদ, মন্দির, গির্জা, ট্যাম্পল সবইতো এই দেশে। এখানের হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কিছু-ই থাকবে না এদেশ না থাকলে। তাই যে কোনো কিছুর বিনিময় এদেশকে বাঁচাতে হবে। বাঁচাতে হবে এদেশের মানুষকে। বাংলাদেশ আমাকে কী দিয়েছে? এই প্রশ্ন না করে আসুন আমরা সবাই চিন্তে করি এই দেশের জন্য আমি কী করতে পেরেছি। সবাইকে ভাবতে হবে, এই দেশ আমার এবং এই দেশের আমি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন